বিভিন্ন সময়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সমালোচিত মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাছিবা খানের অব্যাহতি চান উপজেলাবাসী। আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে নিজেকে আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন এ কর্মকর্তা।ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ,ওয়াজ মাহফিলে বাধা প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে তার বিরুদ্ধে । সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সমন্বিত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন তিনি। এ বিষয়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুনকে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বেআইনিভাবে জেতাতে কাজ করার পাশাপাশি ২১ মে উপজেলা নির্বাচনে তার ভাই স্বপনের আনারস প্রতীকের পক্ষে কাজ করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। সরকারি বালুমহাল থেকে বেআইনিভাবে অর্থ আদায়, ইটের ভাটা ও বিভিন্ন বাজার কমিটির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে ঘুষ আদায়ের বিষয়টি চাওর হয়েছে। মনোহরদী উপজেলার সকল অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহালুল এর মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি টাকা অবৈধ ঘুষ বানিজ্য করেছেন বলে জানা যায়। তাদের কাছ থেকে ৫,০০,০০০/- (পাচঁ লক্ষ) টাকা নিয়ে ৪০,০০০/- (চল্লিশ হাজার) টাকার রশিদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাকী টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি বুলু ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদের কাছ থেকে বিভিন্ন দিবস যেমন- ২৬শে মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারি , ১৪ এপ্রিল উপলক্ষে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করতেন তিনি । মনোহরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম ফারুক নিয়ম বহির্ভূতভাবে ইউএনও’র যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করেছেন বলেও জানা যায়। তার নানাবিধ অনিয়মের বিষয় উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর অভিযোগ করেছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ডেইলি গুপ্তচর পত্রিকায় ” অনিয়ম ও দুর্নীতির মহারানী মনোহরদীর ইউএনও” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর মন্ত্রীপরিষদ সচিব বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন মনোহরদী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী শরিফুল ইসলাম শাকিল।
উপজেলা সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি মারুফুল হক জানান, এ মহিলা মনেপ্রাণে স্বৈরাচারী ভাবধারা লালন করেন। সম্প্রতি যুব সমাজের আয়োজনে সীরাত মাহফিল করতে বাধা দিয়েছেন তিনি।
মনোহরদী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী শরিফুল ইসলাম বলেন, এ কর্মকর্তা সরাসরি আওয়ামী লীগের দালাল। তিনি নানা অনিয়মের সাথে জড়িত। বিপ্লব পরবর্তী স্বাধীন দেশে এরকম নোংরা মানসিকতার কর্মকর্তা থাকা অশোভন, এটি শহীদদের প্রতি চরম বেইমানি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাছিবা খান বলেন, “একটা দুষ্ট চক্র আমার বিরুদ্ধে এসব রটাচ্ছে। এগুলি ভুয়া, অযৌক্তিক, ভ্রান্ত ও মিথ্যা কথা।”
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সময়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিতে যোগদান করেন ৩৪ বিসিএসের এ কর্মকর্তা। এর আগে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার ইউএনও ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসিল্যান্ড হিসিবে কর্মরত ছিলেন তিনি । তার স্বামী আবু সাঈদ শামীম শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত। মনোহরদী উপজেলা পীরপুর গ্রামের গনহত্যার দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনকে তিনি অভিবাভক হিসেবে উপজেলায় পরিচয় দিতেন।
স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে অতি সত্তর এ কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করছেন এলাকাবাসী।
Leave a Reply